রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে বিশেষ নিরাপত্তা ছক নিয়ে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দারা এখন মাঠে। ঈদের পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত এ অবস্থা বলবত্ থাকবে। এ অবস্থায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সহকারী পুলিশ পরিদর্শক থেকে তার ওপরের সব পুলিশ কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বারিধারা ও বনানীতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে। ঈদের ছুটিতে ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের দফায় দফায় বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এ ছাড়া দেশজুড়ে নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। জেলার পুলিশ সুপারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নোট পাঠানো হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের হুমকি নেই বলে পুলিশ প্রধান ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছেন। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ঈদের জামাতে নিরাপত্তায় সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই, আমরা আশঙ্কাও করছি না। তবে আমরা যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যে কোনো উত্সবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব পুলিশের। রোজার শুরু থেকে পাঁচ ধাপে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়। রোজার মাসকে তিন ধাপে ভাগ করে তিন ধরনের নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়। রোজার মাস ভালোভাবেই কেটেছে। এ ছাড়া ঈদের দিনের জন্য থাকছে আলাদা আয়োজন। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাজধানীতে ঈদের জামাতকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদের প্রধান জামাতকে ঘিরে থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। ঈদের দিন সকালে আর্চওয়ের ভিতর দিয়ে মুসল্লিরা জাতীয় ঈদগাহে প্রবেশ করবেন। আর্চওয়ের সামনেই ঈদগাহের মূল ফটকে থাকবে অত্যাধুনিক ডিটেক্টর। সূত্র জানায়, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে। নেওয়া হয়েছে বাড়তি নজরদারিও। বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ব্যাগ মেটাল ডিটেক্টর, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও ম্যানুয়াল চেকিংয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। রাজধানীতে পুলিশের ৮টি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং র্যাবের ৫টি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নিজ নিজ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করবেন। পোশাকধারী ছাড়াও সাদা পোশাকের পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা মাঠে থাকবেন। ঢাকা মহানগরীর সবকটি প্রবেশ ও বহির্গমন পথে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এই নিরাপত্তা বলবত্ থাকবে। পুলিশ-র্যাব সূত্র বলছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে গুলশান ও বারিধারার সব দূতাবাস এবং সংলগ্ন সড়কে থাকছে বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি। তবে ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ঈদগাহ ময়দানের এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা আর্চওয়ে এবং পুলিশ চৌকি থাকবে। সেগুলো ভেদ করেই মুসল্লিদের আসতে হবে। একই সঙ্গে ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াত, মোটরসাইকেলে টহল, ফুট প্যাট্রোল, অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক চেকপোস্ট ও তল্লাশি চৌকি থাকছে রাজধানীজুড়ে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ধরতে পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, রাজধানীতে সার্বিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চেকপোস্ট, প্যাট্রোল, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পিকআপ, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে টহল থাকবে। ঈদে যারা গ্রামের বাড়িতে যাবেন তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবত্ থাকবে। বিশেষ করে আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং শপিং মলের দিকে নজরদারি বেশি থাকছে। বরাবরের মতো রাজধানীসহ সারা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদা তত্পর থাকবেন র্যাব সদস্যরা। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য রাজধানীতে মোতায়েন থাকবে। নাড়ির টানে ঘরে ফেরা ও ঈদের পর ঢাকায় ফেরা মানুষের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টহল থাকবে। থাকবে চেকপোস্ট। অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নগরবাসীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।